সুশান্ত সিং রাজপুত: এক স্বপ্নবাজ তরুণের জীবনের গল্প :
সুশান্ত সিং রাজপুত শুধুমাত্র একজন অভিনেতা ছিলেন না — তিনি ছিলেন একজন স্বপ্ন দেখা মানুষ, একজন গবেষণাপ্রবণ মেধাবী, একজন অনুসন্ধানী আত্মা। ছোট শহর থেকে বলিউড পর্যন্ত তার যাত্রা ছিল সংগ্রামময়, কিন্তু অনুপ্রেরণায় ভরপুর।
শৈশব ও পড়াশোনা: এক প্রতিভাবান ছেলের শুরু
সুশান্ত জন্মগ্রহণ করেন ২১শে জানুয়ারি, ১৯৮৬ সালে, বিহারের পাটনায়। ছোটবেলা থেকেই পড়াশোনায় ছিলেন খুব মেধাবী। তিনি ছিলেন একজন জাতীয়স্তরের অলিম্পিয়াড বিজয়ী, এবং বিজ্ঞান, মহাকাশ ও জ্যোতির্বিজ্ঞানের প্রতি ছিল গভীর আগ্রহ।
১৬ বছর বয়সে মায়ের মৃত্যু তাকে ভীষণভাবে ভেঙে দেয়। এরপর তিনি দিল্লিতে চলে যান এবং দিল্লি কলেজ অফ ইঞ্জিনিয়ারিং (DCE)-এ ভর্তি হন। কিন্তু তার মনে তখনই অভিনয়ের স্বপ্ন বুনছিল।
টিভি থেকে বলিউড: ছোট পর্দা থেকে বড় পর্দার যাত্রা
তৃতীয় বর্ষে ইঞ্জিনিয়ারিং ছেড়ে দিয়ে সুশান্ত চলে আসেন মুম্বাইয়ে। তিনি যোগ দেন শিয়ামক দাভরের ডান্স অ্যাকাডেমি এবং ব্যারি জনের অভিনয় কর্মশালায়।
তার টেলিভিশন অভিষেক হয় ধারাবাহিক ‘পবিত্র ঋষ্তা’-র মাধ্যমে, যেখানে ‘মানব দেশমুখ’ চরিত্রে তার অভিনয় বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। সেখান থেকেই তিনি দর্শকদের হৃদয়ে স্থান করে নেন।
বলিউডের উত্থান: প্রতিভার ঝলক
২০১৩ সালে Kai Po Che! সিনেমার মাধ্যমে বলিউডে তার অভিষেক ঘটে। এরপর Shuddh Desi Romance, Detective Byomkesh Bakshy, M.S. Dhoni: The Untold Story, Chhichhore এবং Kedarnath-এর মতো একাধিক ছবিতে তিনি নিজেকে এক বহুমুখী অভিনেতা হিসেবে প্রমাণ করেন।
বিশেষ করে M.S. Dhoni ছবিতে তার অভিনয় ছিল অসাধারণ, যা তার কেরিয়ারের অন্যতম মাইলফলক হয়ে দাঁড়ায়।
ব্যক্তিগত সংগ্রাম ও অপূর্ণ বিদায়
২০২০ সালের ১৪ই জুন, তার আকস্মিক মৃত্যু সমস্ত দেশকে স্তব্ধ করে দেয়। কোটি কোটি ভক্তের চোখে জল এনে দেয় এই মর্মান্তিক খবর। আজও তার চলে যাওয়া এক রহস্য, এক কষ্টের অধ্যায়।
সুশান্তের স্বপ্ন ও মেধা
অভিনয়ের বাইরেও সুশান্ত ছিলেন একজন বৈজ্ঞানিক মননের মানুষ। তিনি একটি টেলিস্কোপ দিয়ে চাঁদের ছবি তুলতেন, মহাকাশ নিয়ে গবেষণা করতেন এবং এমনকি NASA-তে প্রশিক্ষণের জন্যও গিয়েছিলেন।
ভক্তদের উদ্দেশ্যে তার বার্তা
“সপ্ন দেখো, বড় করে ভাবো, এবং নিজের উপর বিশ্বাস রাখো।”
সুশান্ত নিজেই ছিলেন এই কথার জীবন্ত উদাহরণ।
উপসংহার
সুশান্ত সিং রাজপুত ছিলেন এমন একজন ব্যক্তি, যিনি স্বপ্ন দেখতেন কেবল নিজের জন্য নয়, বরং সমগ্র মানবতার জন্য। তার জীবন আমাদের শেখায় — প্রতিভা, অধ্যবসায় ও কল্পনার মেলবন্ধনে মানুষ অনেক দূর যেতে পারে।