২০২৫ সালের ১২ জুন ভারত এক ভয়াবহ বিমান দুর্ঘটনার সাক্ষী হয়। এয়ার ইন্ডিয়ার একটি বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার (ফ্লাইট AI171) আহমেদাবাদ থেকে লন্ডনের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করার কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই ভেঙে পড়ে। বিমানটি একটি মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের উপর ভেঙে পড়ে এবং এই মর্মান্তিক ঘটনায় বিমানের যাত্রী ও কর্মী মিলিয়ে মোট ২৪১ জনের মৃত্যু ঘটে। হোস্টেলের ভিতরেও প্রাণ হারান আরও অনেকে। এটাই গত তিন দশকের মধ্যে ভারতের সবচেয়ে বড় বিমান দুর্ঘটনা। প্রাথমিক তদন্তে কী কারণ উঠে এসেছে? এই লেখায় আমরা সহজ ভাষায় বিস্তারিত জানবো।
১. ইঞ্জিন থ্রাস্ট বা শক্তি সরবরাহে ব্যর্থতা
বিমানটি উড্ডয়নের পরপরই উচ্চতা না পেয়ে হঠাৎ করে নিচে নামতে শুরু করে। এতে বোঝা যায় যে ইঞ্জিন পর্যাপ্ত থ্রাস্ট দিতে পারছিল না। তদন্তে দেখা গেছে বিমানের General Electric-এর তৈরি GEnx ইঞ্জিনে টেকঅফের সময়ই কোনো যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। এমনকি দুটো ইঞ্জিনের মধ্যে একটি সম্পূর্ণভাবে থ্রাস্ট বন্ধ করে দেয় বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে। এতে বিমানের ওজন ধরে রাখার মতো শক্তি তৈরি হয়নি এবং সেটি নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে নিচে নামতে শুরু করে।
২. ফ্ল্যাপ ও ল্যান্ডিং গিয়ারে সমস্যা
বিমান উড্ডয়নের সময় ফ্ল্যাপ নামানো হয় যাতে ডানার নিচে অতিরিক্ত লিফট তৈরি হয় এবং বিমান সহজে উঠতে পারে। তবে এই বিমানে ফ্ল্যাপ মেকানিজম কাজ করেনি, যা অনেকাংশেই ইঞ্জিনের সমস্যার সাথে সম্পর্কযুক্ত। লিফট কম থাকায় বিমানটি খুব অল্প উচ্চতায় উঠে এবং দ্রুত নেমে আসে। ফ্লাইট ডাটা রেকর্ডার অনুযায়ী, ফ্ল্যাপ বা গিয়ার ঠিকমতো না খোলার ফলে takeoff-এর সময় প্রয়োজনীয় এ্যারোডাইনামিক সাপোর্ট মিলেনি।
৩. Ram Air Turbine (RAT) সক্রিয় হওয়া “Ahmedabad Plane Crash 2025” গুরুত্বপুর্ণ ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যখন দেখা যায়, বিমানের Ram Air Turbine (RAT) takeoff-এর পরেই সক্রিয় হয়ে যায়। সাধারণত RAT শুধুমাত্র তখনই বাইরে বেরিয়ে আসে যখন বিমানটি বিদ্যুৎশক্তি হারায় – অর্থাৎ দু’টি ইঞ্জিনই বন্ধ হয়ে যায় অথবা প্রধান বিদ্যুৎ সাপ্লাই লাইন ব্যর্থ হয়। এটি প্রমাণ করে যে takeoff-এর সময়েই বিমানে সম্পূর্ণ পাওয়ার লস বা জরুরি অবস্থা তৈরি হয়েছিল RAT স্বয়ংক্রিয়ভাবে চালু হয়ে জরুরি শক্তি সরবরাহ করতে শুরু করে। এই পরিস্থিতি বোঝায় যে বিমানের যান্ত্রিক সংকট ছিল অত্যন্ত গুরুতর।
৪. MAYDAY কল এবং তাত্ক্ষণিক পতন
বিমানের ক্যাপ্টেন ও কোকপিট ক্রু তৎক্ষণাৎ “MAYDAY” কল করে কন্ট্রোল টাওয়ারকে সতর্ক করেন। কিন্তু সমস্যার গভীরতা এত বেশি ছিল যে মাত্র ৩০ থেকে ৪০ সেকেন্ডের মধ্যেই বিমানটি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। এতে বোঝা যায় যে ককপিটের পাইলটদের হাতে সময় ছিল খুবই কম এবং তারা ইমারজেন্সি ল্যান্ডিং বা ফিরে আসার কোনো সুযোগই পাননি। বিমানটি নিয়ন্ত্রণহীন অবস্থায় দ্রুত পতন ঘটে এবং মেডিকেল কলেজ হোস্টেলের উপর আঘাত করে।
৫. প্রযুক্তিগত বা সফটওয়্যার ত্রুটি?
“Ahmedabad Plane Crash 2025” বিশেষজ্ঞদের মতে, বোয়িং ৭৮৭-৮ ড্রিমলাইনার একটি উচ্চ প্রযুক্তিসম্পন্ন বিমান হলেও এতে প্রচুর অটোমেশন এবং সফটওয়্যার-নির্ভরতা আছে। কেউ কেউ ধারণা করছেন যে ইঞ্জিন বা ফ্ল্যাপ মেকানিজমে কোনো সফটওয়্যার কনফিগারেশন ইস্যু থেকেও এই দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। যদিও এখনো সফটওয়্যার ত্রুটির বিষয়টি প্রমাণিত হয়নি, তবে তদন্ত দল এটি গুরুত্বসহকারে বিবেচনা করছে।
৬. বিমানের বয়স এবং রক্ষণাবেক্ষণ
এই বোয়িং ৭৮৭ বিমানটি ২০১৪ সালে তৈরি এবং প্রায় ১১ বছরের পুরোনো। যদিও এই মডেল বিশ্বব্যাপী ব্যবহৃত হয় এবং অত্যাধুনিক ধরণের ধরা হয়, কিন্তু দীর্ঘ ব্যবহারের পর এর রক্ষণাবেক্ষণে সামান্য গাফিলতিও মারাত্মক হতে পারে। জানা গেছে, এই বিমানটির রুটিন মেইন্টেনেন্স করা হয়েছিল মাত্র ৩ সপ্তাহ আগে। কিন্তু এতে কোনো ইঞ্জিন পারফরম্যান্স ইস্যু ধরা পড়েছিল কিনা, তা এখন তদন্তাধীন।