ছোটবেলায় আমরা অনেকেই রাতের আকাশে তারা দেখে ভাবতাম, ওই আলোর পিছনে কী আছে? আমার মতো অনেকের কাছেই এটা শুধু কল্পনার খেলা ছিল। কিন্তু Sunita Williams নামের একজন মানুষ সেই কল্পনাকে সত্যি করে দেখিয়েছেন। ভারতীয় মূলের এই আমেরিকান নভোচারী শুধু মহাকাশে পৌঁছাননি, আমাদের মতো স্বপ্ন দেখা মানুষদের মনে একটা আলো জ্বালিয়ে দিয়েছেন।
আজ ২০২৫ সালের এপ্রিল। আমি যখন এটা লিখছি, তখনও সুনীতার গল্প আমার কাছে একটা অনুপ্রেরণা। গত বছর, ২০২৪-এর জুনে তিনি যখন বোয়িং স্টারলাইনারে করে মহাকাশে গিয়েছিলেন, তখন সবাই ভেবেছিল এটা হবে একটা ছোট্ট ৮ দিনের মিশন। কিন্তু কে জানতো যে স্টারলাইনারের কিছু টেকনিক্যাল সমস্যার জন্য Sunita Williams আর তার সঙ্গী বুচ উইলমোর প্রায় ৯ মাস আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে (ISS) কাটিয়ে দেবেন? আমার কাছে মজার ব্যাপার হলো, এই “আটকে পড়া” কথাটা সুনীতার জন্য যেন ঠিক মানায় না। তিনি তো সেখানে বসে হাত গুটিয়ে থাকেননি। গবেষণা করেছেন, মহাকাশে হেঁটেছেন, এমনকি নতুন রেকর্ডও গড়েছেন।
সুনীতার জীবনটা আমার কাছে একটা সিনেমার মতো লাগে। ওহাইওতে জন্ম, বাবা-মায়ের ভারতীয় শিকড়, আর ছোটবেলায় পড়াশোনার পাশাপাশি ভেটেরিনারি ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন। কিন্তু তারপর ভাইয়ের কথায় নেভিতে যোগ দিয়ে শুরু হয় এক নতুন গল্প। হেলিকপ্টার পাইলট থেকে নাসার নভোচারী—এই পথটা কি সত্যি এত সোজা ছিল? আমি তো মনে করি না। নাসায় প্রথমবার আবেদন করেও তিনি বাদ পড়েছিলেন। কিন্তু হাল ছাড়ার মানুষ তো তিনি নন। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করে তিনি ঠিকই মহাকাশে পৌঁছে গেছেন।
আমার কাছে সুনীতার সবচেয়ে মজার আর আশ্চর্যের গল্প হলো ২০০৭ সালে মহাকাশে বোস্টন ম্যারাথন দৌড়ানো। ভাবা যায়? ISS-এর ট্রেডমিলে দাঁড়িয়ে পুরো ৪২ কিলোমিটার দৌড়ে ফেলেছেন! এটা শুধু শরীরের জোর নয়, মনের জোরেরও প্রমাণ। আর এই ২০২৪-২৫ মিশনে তিনি যখন ৯ বার স্পেসওয়াক করে ৬২ ঘণ্টার বেশি মহাকাশে কাটিয়েছেন, তখন আমার মতো অনেকেরই মনে হয়েছে—এই মানুষটার সীমা আছে কি?
Sunita Williams আমাকে শিখিয়েছেন যে স্বপ্ন দেখতে হলে বড় করে দেখতে হয়, আর সেটা পূরণ করতে গেলে হাল ছাড়া যায় না। তার গল্প শুধু মহাকাশের নয়, আমাদের মতো সাধারণ মানুষেরও। তাই পরের বার যখন রাতে তারার দিকে তাকাবো, আমি শুধু ভাববো না, একটু চেষ্টার সাহসও জোগাড় করবো। তুমি কী ভাবো?
সুনীতা উইলিয়ামস এখন পৃথিবীতেই আছেন। গত মাসে, মানে ২০২৫ সালের ১৮ মার্চে তিনি মহাকাশ থেকে ফিরে এসেছেন। অনেক দিন, প্রায় ৯ মাস, আন্তর্জাতিক মহাকাশ স্টেশনে কাটানোর পর তিনি SpaceX-এর একটা মহাকাশযানে চড়ে ফ্লোরিডার কাছে সমুদ্রে নেমেছেন। তার সঙ্গে আরও তিনজন ছিলেন—বুচ উইলমোর আর দুজন নভোচারী। আমার মনে হয়, এখন তিনি টেক্সাসের হিউস্টনে নাসার বড় অফিসে, যেটাকে জনসন স্পেস সেন্টার বলে, সেখানে আছেন। ওখানে ফিরে আসার পর নভোচারীদের একটু রেস্ট আর চেকআপের ব্যাপার থাকে। তবে ঠিক কোন ঘরে বা কোন চেয়ারে বসে আছেন, সেটা তো আমার মতো কেউ বলতে পারবে না, তাই না? তিনি এখন পৃথিবীতে ফিরে এসে নিশ্চয়ই একটু শান্তিতে আছেন।